ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশি-বংশোদ্ভূত প্রথম এমপি রুশনারা আলি। ২০১০ সালে তিনি লেবার পার্টি থেকে প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৮ই জুনের নির্বাচনে তিনি আবারও লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যূষিত বেথনাল গ্রীন এন্ড বো আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনটি বহু বছর ধরেই লেবার পার্টির দখলে এবং সর্বশেষ নির্বাচনেও রুশনারা আলি বিপুল ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার সেখানে নির্বাচনী লড়াইয়ের কি অবস্থা? রুশনারা আলি নির্বাচনী প্রচারাভিযান দেখতে গিয়েছিলেন বিবিসির মোয়াজ্জেম হোসেন:
পূর্ব লন্ডনের অনেক এলাকাই দ্রুত পাল্টাচ্ছে, এক সময়ের রুক্ষ, হতশ্রী জায়গাগুলোতে গড়ে উঠছে ঝকঝকে নতুন বাড়ি-ঘর, কফি শপ, বার, বিভিন্ন দেশের নানা রকম খাবারের দোকান।
কিন্তু সেই পরিবর্তনের ধাক্কাটা স্টেপনি গ্রীনের কাছে এই এলাকায় অতোটা লাগেনি। বেন জনসন রোডের ওপর সারি সারি দোকানপাটের বেশিরভাগই এখনো বাংলাদেশিদের।
সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টায় রাস্তার মাথায় নির্বাচনী প্রচারণার জন্য লেবার পার্টির যে কর্মীরা জমায়েত হয়েছেন, তাদেরও প্রায় সবাই বাংলাদেশি। রুশনারা আলি জানিয়েছিলেন, এখানেই তিনি বিবিসির সঙ্গে কথা বলবেন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে।
কথামত ঠিক সাড়ে ছ’টাতেই এসে পৌঁছালেন তিনি।

যে পরিমাণ সমর্থক সেখানে জড়ো হয়েছেন, তা দেখে খুশি রুশনারা আলি।
“আমাদের লোকজন একেবারে কম হয়নি। আমরা লোকের বাড়ি বাড়ি যাব, দরজায় নক করবো। সেজন্যেই এখানে জড়ো হচ্ছি।”
গেলবার প্রায় ২৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন রুশনারা আলি। বলা যেতে পারে, বেথনাল গ্রিন এন্ড বো লেবার পার্টির নিরাপদতম আসনগুলোর একটি।
নির্বাচনের ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবেই রুশনারা আলী এবং তার সমর্থকদের বেশ নিরুদ্বিগ্ন এবং ভারমুক্ত বলেই মনে হচ্ছে। তবে যেহেতু রোজার মাঝখানে ভোট হচ্ছে, তাই মুসলিম ভোটারদের সবাই ভোট দিতে যাবেন কিনা সেটা নিয়ে একটু চিন্তিত তারা।
“আমরা লোকজনকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি, যাতে তারা ভোট দিতে যায়। কিন্তু আমি বুঝতে পারি যে রমজানের সময় তারা হয়তো এটা নিয়ে ভাববে সবকিছুর শেষে।”
রাস্তায় যেতে যেতে রুশনারা কথা বলেন ভোটারদের সঙ্গে, বিলি করতে থাকেন তাঁর নির্বাচনী লিফলেট।
রুশনারা আলি বেড়ে উঠেছেন এই পূর্ব লন্ডনেই, কাজেই এখানকার অনেক মানুষই তার চেনা জানা, ওয়াকিবহাল এখানকার মানুষের সমস্যা সম্পর্কেও। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি স্বচ্ছন্দে কথা বলেন তাদের সঙ্গে।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার সময় কোন বিষয়গুলো ভোটাররা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে?
“মানুষ সবচেয়ে বেশি যেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন, তা হলো বাসস্থানের সংকট। আমাদের এখানে বাসস্থানের সংকট খুবই তীব্র”, জানালেন তিনি।
কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থকরা কিছুটা হতাশ যে তাদের প্রার্থী এই আসনে জয় অসম্ভব ধরে নিয়ে সেরকম কোন নির্বাচনী প্রচারণাই চালাচ্ছেন না।

দলীয় সমর্থকদের সঙ্গে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী শালোর্ট চিরিকো (বাম দিক থেকে তৃতীয়)
কনজারভেটিভ পার্টি এবার যাকে প্রার্থী করেছে তিনি এক তরুণ আইনজীবী শার্লোট চিরিকো । টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় মাদকের সমস্যা নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে তিনি কিছু দলীয় সমর্থককে নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন টাউন হলের সামনে।
নির্বাচনে হাল ছেড়ে দেয়ার কথা অবশ্য অস্বীকার করলেন তিনি।
“না, আমিতো সেদিনও একটা স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে গিয়েছি। আমি স্থানীয় ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি। আমি বেথনাল গ্রীনের সঙ্গে আছি, আমি এই এলাকায় থেকেছি, কাজ করেছি। আমি এই এলাকা বেশ ভালোভাবেই জানি।”
বেথনাল গ্রীন আসনের জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ বাংলাদেশি, সর্বশেষ হিসেবে প্রায় ৩২ শতাংশ। কিন্তু এই বাংলাদেশিদের ভোটের জন্য এবার রুশনারা আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুর।
হোয়াইট চ্যাপেল এলাকার এক বাড়ির বেসমেন্টে তার এক নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যারা জড়ো হয়েছেন, তাদের শতভাগই বাংলাদেশি, এবং হাতে গোণা দু-তিনজন ছাড়া, সবাই পুরুষ।
আজমল মাশরুর নিজেকে পরিচয় দেন একজন ইমাম হিসেবে, যিনি এর আগে যুক্ত ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির সঙ্গে।
“লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ছেড়ে আমি চলে আসি যখন তারা কনজারভেটিভদের সঙ্গে কোয়ালিশনে যোগ দেয়। কনজারভেটিভদের সঙ্গে আমার আদর্শ মেলে না। আমি লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনকে পছন্দ করি। আমার আদর্শ তার আদর্শের কাছাকাছি। সামাজিক ন্যায় বিচার, সমাজের দরিদ্র এবং দুঃস্থ মানুষের কল্যাণ, আমিও এসব চাই।”
আজমল মাশরুর নিজেকে মধ্য-বামপন্থী আদর্শের কাছাকাছি বলে বর্ণনা করলেও, তার প্রতিপক্ষের দাবি, মূলত ইসলামপন্থী লোকজনই গিয়ে জড়ো হয়েছে তাঁর পেছনে।
লেবার সমর্থকরা মনে করেন আজমল মাশরুর কিছু বাংলাদেশির ভোটে ভাগ বসাতে পারলেও রুশনারা আলীর জয়ের পথে বড় কোন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারবেন না।